শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২৮ অপরাহ্ন
আদম আলী, সাতক্ষীরাঃ
সদ্য গঠিত অন্তর্বর্তীকালিন সরকারকে অভিনন্দন জানিয়ে রাষ্ট্র সংষ্কারে বিশ দফা প্রস্তাবনা দিয়েছে বাংলাদেশ কংগ্রেস। নির্বাচন, বিচার, প্রশাসন, অর্থ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যাপক সংষ্কারের প্রস্তাব নিয়ে আজ শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে দলটি। বেলা ১১টায় দলটির বাংলামটরস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে দলটির চেয়ারম্যান এ্যাডঃ কাজী রেজাউল হোসেন বলেন, রাষ্ট্রে কিছু মৌলিক সংষ্কার দরকার যা কোন রাজনৈতিক সরকার করতে চায় না। এখন জনগণের সামনে সময় এসেছে অন্তর্বর্তীকালিন সরকারকে দিয়ে কাজগুলো করিয়ে নেয়ার।
সংবাদ সম্মেলনে পরবর্তী নির্বাচনের আয়োজন করার আগে একটি স্বাধীন, শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবী জানানো হয় যাতে জনগণ স্থায়ীভাবে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ পায়। এ্যাডঃ কাজী রেজাউল হোসেন বলেন, অতীতে যারাই ক্ষমতায় এসেছে তারাই পরবর্তীতে আবার ক্ষমতায় আসার রাস্তা রাখতে নির্বাচন কমিশনকে নিজেদের মতো সাজাতে চেয়েছে। ফলে নির্বাচন আসলেই সংঘাত সৃষ্টি হয় এবং সুষ্ঠু নির্বাচনে নানান প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, দেশের বিচার, প্রশাসন, অর্থ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক সংষ্কার দরকার। আমাদের নবীন শিক্ষার্থীরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছে তার জন্য বিভিন্ন খাতে কিছু পদ্ধতিগত পরিবর্তন আনতে হবে যাতে দুর্নীতি শূণ্যের কোঠায় নিয়ে আসা যায়। রাষ্ট্রীয় সংষ্কারের সাথে সাথে জনগণের দৃষ্টিভঙ্গী ও মানসিকতার পরিবর্তনের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে। বলা হয়, আবু সাইদসহ শত মানুষের রক্তের বিনিময়ে যে দ্বিতীয় বিজয় পেয়েছে বাংলাদেশ তার সুফল পেতে হলে সবাইকে এই সরকারকে সুপরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করতে হবে।
বাংলাদেশ কংগ্রেসের মহাসচিব এ্যাডঃ মোঃ ইয়ারুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান এ্যাডঃ মোঃ শফিকুল ইসলাম ও এ্যাডঃ মোঃ আব্দুল আওয়াল, যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডঃ মোঃ মিজানুর রহমান, ন্যাশনাল সিনেট সদস্য এ্যাডঃ মোঃ জিয়াউর রশিদ, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিব সম্পাদক মোঃ নাজমুল মোর্শেদ, অর্থ সম্পাদক প্রভাষক মোস্তফা আনোয়ার ভুইয়া রিপন, প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পদক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বাবলু, আইন ও মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডঃ আব্দুর রঊফ খান, দপ্তর সম্পাদক মোঃ তুষার রহমান, সমাজ সেবা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডঃ মোঃ মাইনুল ইসলাম এবং নারী, শিশু, প্রবীণ ও প্রতিবন্ধী বিষয়ক সম্পাদক নিলুফার সুলতানা প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
অন্তর্বর্তীকালিন সরকারের কাছে রাষ্ট্র সংষ্কারে বাংলাদেশ কংগ্রেসের বিশ দফা প্রস্তাবনা: (১) নতুন নির্বাচন কমিশন আইন ও বিধি প্রণয়ন করতে হবে। (২) বিবিএস ক্যাডারদের সমমানে নির্বাচন কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে হবে এবং তাদের মধ্য থেকে ধারাবাহিক পদোন্নতির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করতে হবে। (৩) নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব বিধি দ্বারা কমিশনের সকল নিয়োগ, বদলী ও পদোন্নতি পরিচালিত করতে হবে। (৪) নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী এবং নির্বাহী বিভাগের কর্তৃত্বমুক্ত করতে হবে। (৫) ডিসিদের পরিবর্তে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদেরকে রিটার্নিং অফিসার এবং উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদেরকে সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ করতে হবে। (৬) অবাধ, সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহনমূলক নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করে নির্বাচন দিতে হবে।
(৭) বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত ও স্বাধীন রাখতে হবে। (৮) পেশাগত দক্ষতা, সততা, নিষ্ঠা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে বিচারক/বিচারপতি ও আইন কর্মকর্তা নিয়োগ করতে হবে। (৯) নিয়োগ/পদোন্নতির ক্ষেত্রে জেষ্ঠ্যতার ব্যত্যয় ঘটানো বন্ধ করতে হবে। (১০) ইউনিয়ন পর্যায় থেকে প্রশাসনিক স্তর বিন্যাস ও সার্বিক বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। (১১) দায়িত্বপালনকালে কোন জনপ্রতিনিধি ও তার অধীনস্তদের বৃদ্ধি পাওয়া সম্পদ রাষ্ট্র বরাবর বাজেয়াপ্ত করতে হবে।
(১২) সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, পুলিশ, আনসার-ভিডিপি, র্যাবসহ সকল বাহিনীকে রাষ্ট্রপতির অধীনে স্বাধীন প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে হবে এবং স্ব স্ব চাকুরি বিধি দ্বারা নিয়োগ, বদলী ও পদোন্নতি পরিচালিত হতে হবে। (১৩) কোন ব্যক্তি দুই বারের অধিক রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকার প্রধান থাকতে পারবেন না এবং তিন বার সরকার প্রধান হলে তিনি রাষ্ট্রপ্রধান হতে পারবেন না। (১৪) দুর্নীতি দমন কমিশনকে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী করতে হবে। (১৫) সরকারকে অবগত না করে বিদেশে কোন সম্পদ করলে বা গচ্ছিত রাখলে সমপরিমাণ অর্থ জরিমানার বিধান করতে হবে। (১৬) ঋণখেলাপী ও ঋণজালিয়াতীসহ ব্যাংকিং খাতের সব ধরণের অনিয়ম ও দুর্নীতিরোধে উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে ব্যাংক মনিটরিং কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে হবে। (১৭) ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদে কোন রাজনৈতিক ব্যক্তিকে নিয়োগ দেয়া যাবে না।
(১৮) শিক্ষা ব্যবস্থার আমুল পরিবর্তন আনতে হবে এবং কর্মমুখী শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে। (১৯) ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে জাতীয় মানের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। (২০) চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিদেশগামীতা রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। সকল প্রকার চিকিৎসা সেবা ও ওষুদের মান বৃদ্ধি ও মূল্য কমাতে হবে।
All rights reserved © 2020-2024 dainikparibarton.com
অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।